একটা রোগের নাম বললে সেটি হবে র্যাবিস বা জলাতঙ্ক।
র্যাবিস ভাইরাস একবার তার লক্ষণ প্রকাশ করতে পারলে মৃত্যু প্রায় সুনিশ্চিত।
তবে সারা পৃথিবীতে মাত্র ১০ টা ডকুমেন্টেড কেস আছে যেখানে র্যাবিস হবার পরেও আক্রান্ত ব্যাক্তি আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে গেছেন। র্যাবিসের টিকা না পেয়েও বিস্ময়করভাবে বেঁচে যাওয়া প্রথম ব্যাক্তিটির নাম
জিনা গিজি।
২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ১৫ বছর বয়সী জিনার শরীরে র্যাবিসের লক্ষণ দেখা দেয়। চিকিৎসা হিসেবে তাকে সম্পূর্ণ কোমায় রেখে ৭ দিন ইন্টেন্সিভ লাইফ সাপোর্ট এবং এন্টিভাইরাল দেয়া হয়েছিল। ৭ দিন পর তাকে কোমা থেকে ফেরানো হয় এবং দীর্ঘ ৭৫ দিনের চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান, তবে র্যাবিস ভাইরাস এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সাইড ইফেক্টের কারণে তার নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিস্ময়করভাবে বেঁচে যাওয়া এই নারী বর্তমানে দুই জমজ সন্তানের জননী।
মিলওয়াউকি প্রোটোকল নামের এই চিকিৎসা পদ্ধতি পরবর্তী সময় র্যাবিসে আক্রান্ত আরো ৬ জন রোগীর ওপর প্রয়োগ করা হলেও তাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মনে করেন জিনার এই বিস্ময়কর সারভাইভাল সম্ভব হয়েছে তার এক্সট্রাঅর্ডিনারি ইমিউনিটির কারণে অথবা অপেক্ষাকৃত দূর্বল স্ট্রেইনের কোন র্যাবিস ভাইরাস প্রজাতির কারণে।
🔹যেসকল প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ে র্যাবিসের টিকা নিতে হবে : কুকুর,বিড়াল,
শেয়াল, বানর, বেজি, বাদুড়।
🔹যেসকল প্রাণীর কামড়/আঁচড়ে টিকা নেয়ার প্রয়োজন নেই:
ইঁদুর, খরগোশ, কাঠবিড়ালি, গুঁইসাপ, মানুষ।
🔹আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে আসলে কি ব্যাবস্থা নেবেন?
👉 আক্রান্ত স্থান সাবান পানি দিয়ে ১০ থেকে ২০ মিনিট ধরে খুব ভাল করে ধুয়ে ফেলবেন।
👉 অক্ষত চামড়ায় শুধুমাত্র প্রাণীর লালার স্পর্শ লাগলে কোন টিকা নিতে হবেনা।
👉 আঁচড় লাগলে বা ছুলে গেলে যদি কোন রক্তপাত না হয়, তাহলে সাবান পানি দিয়ে ধোয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব র্যাবিসের টিকা নেবেন।
👉 রক্তপাত হলে অথবা উল্লিখিত প্রাণীর লালা কোনভাবে শরীরের ভেতরে (চোখ, নাক, মুখ দিয়ে) প্রবেশ করলে যত দ্রুত সম্ভব র্যাবিস টিকা এবং তার সাথে র্যাবিস এন্টিবডি নিতে হবে।
🔹র্যাবিসে আক্রান্তের লক্ষ্মণ :
র্যাবিস ভাইরাস আক্রান্ত স্থান হতে ধীরে ধীরে স্নায়ু বেয়ে মস্তিষ্কের দিকে যেতে থাকে। শরীরে প্রবেশের পর সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েকমাসের মধ্যে প্রথম লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর মৃত্যু প্রায় সুনিশ্চিত।
প্রথমে আক্রান্ত স্থান ঝিমঝিম করা, অবশ লাগা, ব্যাথা অনুভূত হওয়া এবং সাধারণ ফ্লু এর মত লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।
ফিউরিয়াস র্যাবিসের ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যাক্তি পাগলের মত আচরণ করে যেমন হিংস্রতা, খিঁচুনি, হ্যালুসিনেশন, ঘোরের মধ্যে থাকা, মুখ দিয়ে লালা পড়া, জলাতঙ্ক ইত্যাদি। খাবার গিলতে গিয়ে, এমনকি খাবার দেখলেও গলবিলের মাংসপেশি তীব্রভাবে সংকুচিত হয় এবং তীব্র ব্যাথা হয়। একারণে প্রচন্ড পানির পিপাসা পেলেও আক্রান্ত ব্যাক্তি পানি পান করতে পারেনা।
প্যারালাইটিক র্যাবিসের ক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থান থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে সারা শরীর অবশ হতে থাকে।
রাবিসের চূড়ান্ত পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যাক্তি কোমাতে চলে যায় এবং মৃত্যুবরণ করে।
🔹প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।
র্যাবিসে আক্রান্ত হবার হাত থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় জীবাণুর সংস্পর্শে আসার পর যত দ্রুত সম্ভব র্যাবিস ভ্যাক্সিন গ্রহণ করা। ভ্যাক্সিনের কারণে ভাইরাস সক্রিয় হবার পূর্বেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থা তার প্রয়োজনীয় সমরাস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হয়ে যায়। পূর্বপ্রস্তুতির কারণে র্যাবিস ভাইরাস শরীরে টিকে থাকার এবং রোগ সৃষ্টি করার কোন সুযোগই পায়না।
ধন্যবাদ।
©Dr. A. N. RAKIB
Heathy Horizons Bangladesh
Comments
Post a Comment