উচ্চ রক্তচাপ বা Hypertension কি?
আপনার রক্তনালিকে একটি পানির hose পাইপের সঙ্গে তুলনা করুন। চাবি ঘুরিয়ে পানির ফ্লো বাড়িয়ে দিলে অথবা পানির পাইপ হাত দিয়ে চেপে ধরলে তীব্র চাপে পানি প্রবাহ হয়।
অনুরূপভাবে রক্তের ভলিউম বেড়ে গিয়ে অথবা রক্তনালি সরু হয়ে গিয়ে, স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চ চাপে রক্তের প্রবাহকে Hypertension বলে।
রক্তচাপ দুই ধরনের। হার্ট পাম্প করার সময় রক্তনালিতে যে চাপ থাকে সেটি সিস্টোলিক (Systolic) প্রেসার এবং রিলাক্স হবার সময় যে চাপ থাকে সেটি ডায়াস্টোলিক (Diastolic) প্রেসার। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যাক্তির যেকোন একটি বা উভয় ধরনের প্রেসারই বেশি থাকতে পারে।
চিকিৎসকের চেম্বারে দুই বা ততোধিক দিন প্রেসার মেপে যদি দেখা যায় আপনার গড় রক্তচাপ-
Systolic pressure 140 mmHg বা তার বেশি
অথবা
Diastolic pressure 90 mmHg বা তার বেশি
তাহলে আপনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কি?
সাধারণত কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়না যেকারণে Hypertension কে Silent Killer বলা হয়।
তবে অতি উচ্চ রক্তচাপের ফলে কোন জটিলতা তৈরি হলে সেই জটিলতার লক্ষণ হিসেবে বুক ধড়ফড় করা, শরীর প্রচন্ড ঘামানো এবং মাথা ব্যাথা ইত্যাদি হতে পারে।
Hypertension এর কারণ কি?
৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়না এবং একে Essential Hypertension বলে। নির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও Essential Hypertension-এর পেছনে কিছু risk factor জড়িত।
উচ্চ রক্তচাপের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো হচ্ছে:
👉 বার্ধক্য
👉 জেনেটিক লিংক বা পারিবারিক ইতিহাস
👉 অতিরিক্ত ওজন, রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল
👉 দৈনিক স্বাভাবিক মাত্রার অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
👉 পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া
👉 এলকোহল, তামাক সেবন
👉 শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, Sedentary work
👉 ডায়াবেটিস
এই রিস্ক ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে অনেকগুলো আপনি চাইলে এড়াতে পারবেন এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারবেন।
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হলে ক্ষতি কি?
উচ্চ রক্তচাপ বা Hypertension একটি Silent Killer যেটি নিরবে স্ট্রোক, হার্ট এটাক এবং দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার গুরুত্ব কি?
রক্তচাপ সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। গবেষণা হতে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায়, শুধুমাত্র রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩০%, হার্ট এটাকের ঝুঁকি ২৫% এবং দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগের ঝুঁকি ২৩% পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব।
স্বাভাবিক রক্তচাপের টার্গেট কত?
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যাক্তির টার্গেট প্রেসার 140/90 এর নিচে হতে হবে। তবে বয়স, রিস্ক ফ্যাক্টর এবং অন্যান্য রোগ বিবেচনায় টার্গেট প্রেসার ভিন্ন হতে পারে যেটি চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন।
কতদিন পরপর রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিৎ?
১৮ বছরের উপরে সকল ব্যাক্তি যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে, তারা প্রতি ২ বছর পরপর চিকিৎসকের মাধ্যমে রক্তচাপ পরীক্ষা করবেন।
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত বা রিস্ক ফ্যাক্টর আছে অথবা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি, চিকিৎসক নির্ধারিত সময় অনুযায়ী রক্তচাপ পরীক্ষা করবেন।
রক্তচাপ মাপার পূর্বে করণীয়-
রক্তচাপ মাপার পূর্বে ৪-৬ ঘন্টা চা, কফি ইত্যাদি ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন না।
২ ঘন্টা সিগারেট খাবেন না।
৩০ মিনিট কোন খাবার খাবেন না।
রক্তচাপ মাপার সময় পায়খানা কিংবা প্রস্রাবের চাপ থাকা যাবেনা।
৫ মিনিট সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকবেন।
রক্তচাপ মাপার সময় চেয়ারে হেলান দিয়ে বসবেন এবং
হাত ঝুলিয়ে রাখবেন না। আপনার বাহু হার্টের লেভেলে রাখবেন।
রক্তচাপ কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন?
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপায় দুটি-
👉 প্রথমটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন
প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটা, নিয়মিত ব্যায়াম, কাঁচা লবণ ও সোডিয়ামযুক্ত খাবার পরিহার, ওজন নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টিকর কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া, তামাক ও এলকোহল পরিহার ইত্যাদির মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনা সম্ভব।
👉 দ্বিতীয় উপায় হল নিয়মিত ঔষধ খাওয়া।
আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইলের পাশাপাশি ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা সেটি চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন। ঔষধের প্রয়োজন থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নিয়মিত খাবেন এবং সেই সাথে ঔষধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা জরুরী।
এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ভূমিকা শুধুমাত্র রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের প্রভূত উন্নতি ঘটাবে এবং সংশ্লিষ্ট অনেক রোগের ঝুঁকি থেকে আপনাকে দূরে রাখবে।
ধন্যবাদ
©Dr. A. N. RAKIB
Healthy Horizons Bangladesh
Comments
Post a Comment