কাছের মানুষদের সাথে কাটানো সময় কিভাবে উড়ে চলে যায় অথচ অপেক্ষার সময় যেন অফুরন্ত, তাইনা?
অসুস্থতার গল্পতো অনেক হল, আজ অন্যরকম এক গল্প শুনুন:
রুমেল (ছদ্মনাম) কিছুদিন যাবত অনেকটা স্ট্রেসের মধ্যে আছে। একদিকে আসন্ন বিসিএস পরীক্ষার চাপ, আবার মা গেছেন বোনের বাড়ি বেড়াতে। বাসার সবকিছু তাকেই সামলাতে হচ্ছে। পাশেই চাচার ফ্ল্যাট, কিন্তু বাসায় সে সম্পূর্ণ একা।
রাত তখন ২ টা বেজে ৩০ মিনিট। অনেক রাত পর্যন্ত পড়তে পড়তে একটু তন্দ্রামতো এসেছিলো, হঠাৎ অজানা কারণে তন্দ্রার ভাব কেটে যায়।
কানের পাশে জেট প্লেনের সাঁইসাঁই শব্দ শুনে সে চোখ মেলে তাকায়।
শব্দটাতো জেট প্লেনের নয়! মাথার উপর ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানের! বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো, এটা কোন স্বাভাবিক ঘূর্ণন নয়। ভয়াবহ আওয়াজ তুলে এত্তো জোরে ঘুরছে, মনে হচ্ছে ঘূর্নিঝড় মোখার সৃষ্টি বোধহয় এখান থেকেই! ভয়ে চোখ বন্ধ করে উপুড় হয়ে শুতে গিয়ে খটকা লাগলো। তার শরীরটাও যেন মিলিসেকেন্ডে মুভ করছে! উঠে বসলো, বেসিনে গেলো, মুখে পানির ঝাপটা দিলো, হাতে রিস্টওয়াচ পরলো।
না! কোন স্বাভাবিক গতিতে নয়। সে যেন মার্ভেল ইউনিভার্সের সুপারহিরো কুইকসিলভার!
জানালা দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েটা দেখা যায়। বাংলাদেশের পুরাতন গাড়িগুলো সব উঠিয়ে যেন সুপারসনিক বাস-ট্রাক নামিয়েছে রাস্তায়! হাতে থাকা ঘড়িটার সেকেন্ডের কাঁটাও ফ্যানের গতিতে ঘুরে চলছে! রাস্তার ধারে গাছের পাতাগুলো নড়ছে, তবে স্বাভাবিকভাবে নয়, মনে হচ্ছে অশরীরী কোন শক্তি গাছগুলো ঝাঁকাচ্ছে প্রচন্ডভাবে!
আর নাহ, জোর করে দুই চোখ বন্ধ করে রাখল রুমেল, জেট প্লেন ঘুরে চলছে তখনো সাঁই সাঁই শব্দে...
এতক্ষণ যে গল্পটি শুনলেন সেটি নিছক গল্প নয়। মস্তিষ্কের এক অদ্ভুৎ অনুভূতি, যার নাম Tachysensia. ঘড়ির কাঁটার সময় আর আপনার সময়ের উপলব্ধি, দুটি ভিন্ন বিষয়।
Your perception of time could be distorted.
এবার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতায় আসি...
আপনার শৈশবকালের কথা মনে আছে? কেমন ছিলো আপনার গ্রীষ্মকালীন ছুটি? কেমন ছিলো মাহে রমজানের মাস আর ঈদের জন্য অধীর অপেক্ষা?
শৈশবের সময় ছিলো অফুরন্ত, করার মত ছিলো অনেক কিছু।
শৈশব পেরিয়ে এসেছেন, এখন কেন যেন প্রতিটা দিন ঝড়ের গতিতে পেরিয়ে যায়, বছর ফুরায় চোখের পলকে।
কারণ কি?
আমাদের প্রতিটা দিন ২৪ ঘন্টার এক একটা ভিডিও ফ্রেম, যেখানে অনেকগুলো স্থির চিত্র থরে থরে সাজানো। প্রতিদিনের এই ঘটনাবলী, স্থির ছবি আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছে, মস্তিষ্ক সেটাকে প্রসেস করে। শৈশবে এই প্রসেসিং হয় দ্রুত, তাই সময়কে মনে হয় অনেক দীর্ঘ। বয়স বাড়ে, প্রসেসিং পাওয়ার কমে, ঝড়ের বেগে সময় চলে যায় প্রতিনিয়ত।
আপনার খুব তাড়া, হাতে একদম সময় নেই। তাই প্রার্থনা কিংবা নামাজের সময় কম। নামাজ পড়েন তড়িঘড়ি করে, একটু সময় যদি বাঁচে।
কিন্তু সময় আর বাঁচেনা, আপনার প্রতিটা দিন যেন আরো দ্রুত ফুরিয়ে যায়।
মনে রাখবেন, ধীরস্থির কাজ ধীরে সুস্থে করবেন।
Beacuse
Your perception of time could be distorted!
Written by
©Dr. A. N. RAKIB
Healthy Horizons Bangladesh
Comments
Post a Comment