দীর্ঘমেয়াদি অবসাদ ও ক্লান্তিতে ভুগছেন, কিন্তু পরীক্ষানিরীক্ষা করেও কোন শারীরিক বা মানসিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না? Chronic Fatigue Syndrome সম্পর্কে জানুন।
Chronic Fatigue Syndrome (CFS) কি?
৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে একটানা অথবা বারবার
প্রচন্ড অবসাদ ও ক্লান্তিতে ভুগছেন, এমনকি পূর্বে দৈনন্দিন যে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারতেন আপনার শরীর এখন তার অর্ধেকও নিতে পারছেনা, অথচ চিকিৎসক পরীক্ষানীরিক্ষা মাধ্যমে কোন শারিরীক বা মানসিক কারণ খুঁজে পাননি। সেই সাথে নিম্নবর্নিত ৪ টি বা তার অধিক লক্ষন যদি থাকে, তাহলে আপনি Chronic Fatigue Syndrome এ ভুগছেন।
লক্ষণগুলো কি কি?
Chronic Fatigue Syndrome এ আক্রান্ত ব্যাক্তির নিম্নবর্নিত ৪ টি বা তার অধিক লক্ষন থাকবে:
→সামান্য পরিশ্রমে অনেক বেশি ক্লান্তি ভর করা।→মাথা ব্যাথা বা মাথায় অস্পষ্ট ধোঁয়াশা অনুভূতি।
→শরীরের মাংসপেশি এবং পায়ে ব্যাথা হওয়া, বিশেষ করে ব্যায়ামের পর।
→অনিয়ন্ত্রিত আবেগ, মুড সুইং।
→মনোযোগে ব্যাঘাত।
→কোন কিছু মনে রাখতে অসুবিধা।
→ঘুমজনিত সমস্যা, বিশেষ করে অতিরিক্ত ঘুমানো।
→ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর দূর্বল লাগা।
→হতাশার অনুভূতি।
→শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রমের পর হাত-পা ছেড়ে দেয়া ও অসুস্থ লাগা।
→গিরায় ব্যাথা হওয়া।
→গলা ব্যাথা হওয়া।
→বুক ধড়ফড় করা।
→শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও জ্বর জ্বর লাগা।
→গলার কাছে গ্রন্থি ফুলে ওঠা।
→শোয়া/বসা থেকে দাঁড়ালে হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া।
→অন্যান্য লক্ষণ যেমন কানের মধ্যে টেলিফোন ringing-এর মত আওয়াজ হওয়া ইত্যাদি।
এই রোগের কারণ কি?
বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত Chronic Fatigue Syndrome-এর কারণ বের করতে পারেনি। তবে গবেষণায় দেখা যায়, এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত প্রতি ৩ জন ব্যাক্তির মধ্যে ২ জন ব্যাক্তি পূর্বে কোন ভাইরাল ফ্লু জাতীয় অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছিল। এজন্য CFS-এর অপর নাম Post Viral Syndrome, যদিও নির্দিষ্ট কোন ভাইরাসকে এর কারণ হিসেবে শনাক্ত করা যায়নি। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী COVID-19 মহামারীর পর এই রোগের সাথে ভাইরাল ফ্লু এর সম্পৃক্ততা আরও বেশি নজরে আসে।
কোন বয়সে হয়?
সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সে লক্ষণ শুরু হয়। তবে যেকোন বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
আক্রান্ত ব্যাক্তির আরোগ্যের সম্ভাবনা কতটুকু? এ রোগের কারণে কি জটিলতা হতে পারে?
সময়ের সাথে আক্রান্ত ব্যাক্তি ধীরে ধীরে ক্রমাগত সুস্থতার দিকে যেতে থাকেন কিন্তু মাঝে মাঝে লক্ষণগুলো ফেরত এসে আবার চলে যেতে পারে। দূর্ভাগা অল্প কিছু ব্যাক্তির ক্ষেত্রে আজীবনও থাকতে পারে।
এই রোগে অন্য কোন জটিলতা হয়না, তবে আক্রান্ত ব্যাক্তি রাগ, হতাশাগ্রস্ত বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে পারেন।
চিকিৎসা কি?
এই সিন্ড্রোমের মিরাকেল কোন ঔষধ বর্তমানে নেই। আক্রান্ত ব্যাক্তির প্রয়োজন সাপোর্ট এবং কেয়ারিং। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগ সময়ের সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই উন্নতির দিকে যায় যদিও ভালো হতে অনেকের যেখানে ২ বছর লাগে, সেখানে কারো কারো ক্ষেত্রে ১০ বছর বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।
এই ক্লান্তি ও অবসাদের সাথে কিভাবে মানিয়ে নিবেন?
Listen to your body & make a day-to-day plan of what to do.
→পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। বিশ্রাম যদিও রোগ ভালো করবেনা, তবে লক্ষণগুলোর সাথে শরীরকে মানিয়ে নিতে অনেক সাহায্য করবে।
→অতিরিক্ত কাজের ভার, ক্লান্তি-অবসাদ ভর করে এমন কোন স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন।
→লম্বা সময়ের জার্নি পরিহার করুন।
→আপনাকে মেন্টাল সাপোর্ট দেয় এমন মানুষদের সাথে সময় কাটানো গুরুত্বপূর্ণ।
→সহনীয় মাত্রায় নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
→যোগব্যায়াম (Meditation) শিখুন এবং নিয়মিত যোগব্যায়াম করুন।
→ব্যাথার জন্য Over the counter painkiller খেতে পারেন।
রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তি অনেক সময় বারবার চিকিৎসক পরিবর্তন করেন যেটাতে কোন লাভ হয়না, বরং হতাশা বাড়ে। এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক দৈনন্দিন জীবনযাপনের একটা রুটিন তৈরি করলে উপকৃত হবেন।
ধন্যবাদ।
Written by
Dr. A. N. RAKIB
Comments
Post a Comment