কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি? চিকিৎসকের কাছ থেকে কিডনি পাথরের আদ্যোপান্ত জানুন।
২০-৫০ বছর বয়স্ক মানুষ এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের আক্রান্তের হার প্রায় ৩ গুণ। Journal of BCPS এ ২০১৫ সালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের টারশিয়ারি হাসপাতালগুলোতে পেটের আল্ট্রাসোনোগ্রাম করতে আসা ১২.৯% মানুষ কিডনির পাথরে আক্রান্ত।
কিডনিতে পাথর হবার ঝুঁকি বাড়ে কখন?
→পানি কম খেলে, দীর্ঘসময় প্রস্রাব ধরে রাখলে বা তীব্র গরম আবহাওয়ায় প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।
-খাবার লবণ, প্রোটিন দৈনিক চাহিদার অতিরিক্ত খেলে।
→রক্তের সম্পর্কীয় অন্য কারো কিডনিতে পাথর হলে।
→পূর্বে কিডনিতে পাথর ছিল, বিশেষ করে অল্প বয়সে পাথর হলে পুনরায় কিডনিতে পাথর হবার ঝুঁকি বাড়ে।
→নির্দিষ্ট কিছু রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির কিডনিতে পাথর হবার ঝুঁকি বেশি থাকে (যেমন: Hyperparathyroidism, মেটাবলিক সিনড্রোম ইত্যাদি।
কিডনির পাথর হলে কি লক্ষণ প্রকাশ পাবে?
খুব ছোট পাথর কোন লক্ষণ ছাড়াই প্রস্রাবের সাথে চলে যেতে পারে। বেশি বড় পাথর কিডনি থেকে মুত্রনালীর দিকে যেতে পারেনা যার কারনে তীব্র ব্যাথা হয়না, তবে পিঠের দিকে ব্যাথা অনুভূত হতে পারে। মাঝারি বা ছোট আকৃতির পাথর যদি মুত্রনালী (Ureter) দিয়ে নামে অথবা আটকে যায় তাহলে প্রচণ্ড ব্যাথা হয়। এটাকে Renal colic বলে। তীব্র ব্যাথা সাধারণত ৮ ঘন্টার বেশি থাকেনা। এছাড়া বমি হতে পারে, প্রস্রাবের সাথে সামান্য রক্ত যেতে পারে।
কি অসুবিধা হবে?
বেশিরভাগ পাথর কিডনিতে থেকে যায় অথবা প্রস্রাবের সাথে চলে যায়, তেমন কোন অসুবিধা করেনা।
তবে অনেক ক্ষেত্রে পাথরের কারনে ইনফেকশন হতে পারে,
মুত্রনালীতে আটকে গিয়ে প্রচন্ড ব্যাথা ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?
কিডনির পাথর হবার ঝুঁকি বেশি এমন ব্যাক্তি নিম্নোক্ত পরামর্শগুলো মেনে চলবেন।
→প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন। একবারে বেশি নয়, সারাদিনে অল্প অল্প করে পান করুন। বিশেষ করে ঘুমানোর আগে অবশ্যই পানি পান করুন।
→তাজা লেবুর শরবত খান।
→লবণ কম খাবেন, পাতে লবণ খাবেন না।
→চকোলেট, কার্বোনেটেড ড্রিংকস সম্পূর্ণ পরিহার করুন।
→ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এক্ষেত্রে উপকারী তবে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবেন না, বিশেষ করে খালি পেটে অথবা দৈনিক চাহিদার অতিরিক্ত। এতে পাথর হবার ঝুঁকি বাড়বে।
→অপ্রয়োজনীয়ভাবে Vitamin-D এবং Vitamin-C supplement খাবেন না।
→অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: কামরাঙ্গা, পালংশাক) পরিহার করুন।
→খাবারে অতিরিক্ত প্রোটিন পরিহার করুন।
সুষম খাবার খান, প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান।
কখন চিকিৎসা নেবেন?
কোন লক্ষণ প্রকাশ করছেনা এবং আকারে ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট পাথর ৯০% ক্ষেত্রে কোন চিকিৎসা ছাড়াই প্রস্রাবের সাথে চলে যায়। পাথরের সাইজ বাড়ার সাথে সাথে এই হার কমতে থাকে। ৬ মিলিমিটারের চেয়ে বড় পাথরের আপনা-আপনি ক্লিয়ার হবার সম্ভাবনা মাত্র ১০%। আকার যেমনই হোক, পাথরের কারনে কোন শারীরিক অসুবিধা তৈরি হলে একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
ধন্যবাদ।
Written by
©Dr. A. N. RAKIB
Comments
Post a Comment