বিয়ের পর সন্তান কখন নেবেন?


বিয়ের পর সন্তান কখন নেবেন, মেডিকেল সায়েন্স কি বলে?


 একজন নারী তাঁর জন্মের সময় নির্দিষ্ট সংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, এই ডিম্বাণুগুলোতে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হয়ে বিশেষ উদ্দেশ্যে কোষ বিভাজনের একটি ধাপে আটকে যায় (Arrested in Metaphase of Miosis-2) এবং শুধুমাত্র নিষিক্ত হবার পরেই কোষ বিভাজন সম্পূর্ণ হয়। মাসিকের সময় প্রতি মাসে ১ টি করে ডিম্বাণু ক্ষরণ হয় এবং নিষিক্ত না হলে নষ্ট হয়ে যায়। কোন নারী যদি ২৫ বছর বয়সে সন্তান নেয় তাহলে তার ওই ডিম্বাণুর কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণভাবে আটকে থাকে ২৫ বছর পর্যন্ত। কিন্তু কেউ যদি ৩০-৩৫ বছর বয়সে সন্তান নেয় তাহলে সেই নির্দিষ্ট ডিম্বাণুর বিভাজন সম্পূর্ণ হবার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৩০-৩৫ বছর পর্যন্ত।মায়োসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ক্রোমোজম সংখ্যা সুনির্দিষ্টভাবে বন্টন হয়, কিন্তু ডিম্বাণু যতই পুরনো হয় (৩০-৩৫ বছর বা তারও বেশি) ক্রোমোজমের এই বন্টনের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়। কখনো ২৩ জোড়া ক্রোমোজম হয়ে যায় ৪৭ টি ক্রোমোজম আবার কখনো হয় ৪৫ টি ক্রোমোজম। এই ৪৭ টি ক্রোমোজম (47,XY,+21 অথবা 47,XX,+21) বহন করা বাচ্চার জন্মগত ত্রুটিকে আমরা বলি Down syndrome (Trisomy 21). ২৫ বছরের কম বয়স্ক মায়েদের ক্ষেত্রে প্রতি ২০০০ টি ভ্রুনের মধ্যে একটি ভ্রুণের (কোন নির্দিষ্ট সময়ে ২৫ বছর বা তার কম বয়সের ২০০০ জন নারী গর্ভবতী হলে তাঁদের একজনের ভ্রুণের ক্ষেত্রে) এরুপ জন্মগত ত্রুটি হতে পারে। 

নারীর বয়স বাড়ার সাথে এরকম জন্মগত ত্রুটির সম্ভাব্যতা বাড়তে থাকে। ৩৫ বছর বয়সে প্রতি ৩০০ ভ্রুণের মধ্যে ১ টি ভ্রূণ,  ৪০ বছর বয়স্ক নারীদের প্রতি ১০০ ভ্রুণের ১ টি এরুপ জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। শুধু Down syndrome -ই নয়, নারীর বয়স বাড়ার সাথে সাথে নবজাতকের বিভিন্ন ধরণের জন্মগত ত্রুটির সম্ভাব্যতা বাড়তে থাকে। অবশ্যই একজন নারীর স্বাধীনতা আছে তিনি কখন মা হবেন সেটা নির্ধারণ করার, কিন্তু প্রকৃতির নিয়মগুলো (Natural history) জানাটাও তাঁর জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জন্মগত ত্রুটি নিয়ে বড় হওয়া শিশুর লালনপালনের কষ্ট শুধুমাত্র শিশুটির বাবা মা-ই বুঝবেন।

এটা একটা উদাহরণ, বেশি বয়সে সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে (বিশেষ করে বেশি বয়সে প্রথম সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে) বাচ্চা অথবা মায়ের জটিলতা হতে পারে, তবে সম্ভাবনা একটা পার্সেন্টেজ এ বাড়ে, বেশিরভাগ মা-শিশু আল্লাহর রহমতে ভালো থাকেন। বেশি বয়সে বাচ্চা নেয়ার ক্ষেত্রে মা-শিশুর ঝুঁকি কমানোর উদ্দেশ্যে নিয়মিত প্রসব-পূর্ব চেকআপ এবং বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি গর্ভকালীন শনাক্তকরণে Fetal anamoly scan এর মত ব্যাবস্থা নেয়া যেতে পারে। আপনার অথবা চিকিৎসকের করণীয় এটুকুই, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।


ধন্যবাদ।

Written by Dr. A. N. RAKIB

Comments